লালমনিরহাট জেলার তিন উপজেলার পাঁচটি সীমান্ত দিয়ে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ৩৮ জন ভারতীয় মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠানোর (পুশ-ইন) চেষ্টা করেছে। বুধবার ভোররাতে একযোগে এ ঘটনা ঘটে। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও স্থানীয় বাসিন্দাদের তৎপরতায় পুশ-ইন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
বিজিবি সূত্র জানায়, পুশ-ইনের শিকার ব্যক্তিদের কাছ থেকে আধার কার্ড, প্যান কার্ড, মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ জোরপূর্বক কেড়ে নেওয়ার পর তাঁদের সীমান্তের কাঁটাতারের কাছে এনে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করে বিএসএফ। এই ব্যক্তিরা বর্তমানে ভারতের অংশে কাঁটাতারের ঠিক ওপারে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। এ ঘটনার ফলে সীমান্ত এলাকাগুলোতে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিজিবি’র তথ্যমতে, একযোগে যেসব সীমান্ত দিয়ে পুশ-ইনের চেষ্টা করা হয়:
আদিতমারী উপজেলার দূর্গাপুরের চওড়াটারি সীমান্ত দিয়ে ১৩ জন,
হাতীবান্ধা উপজেলার বনচৌকি সীমান্ত দিয়ে ৬ জন,
পাটগ্রাম উপজেলার আমবাড়ি, পঁচা ভান্ডার ও ধবলগুড়ি সীমান্ত দিয়ে ১৯ জন।
সবমিলিয়ে ৩৮ জন নারী, পুরুষ ও শিশু, যাদের বয়স ৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে বলে জানা গেছে।
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদি ইমাম জানান, “চওড়াটারি সীমান্ত দিয়ে ভোরে ১৩ জনকে বাংলাদেশে পুশ-ইনের চেষ্টা করলে আমাদের সদস্যরা বাধা দেন। দ্রুত সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয় এবং বিএসএফকে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের পুশ-ইন আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কাউকে জোরপূর্বক সীমান্ত পেরিয়ে পাঠানো মানবাধিকারের পরিপন্থী।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, সীমান্তে আটকে থাকা একদল নারী-পুরুষ তাদের দুরবস্থার কথা জানাচ্ছেন। তারা জানান, তারা পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তারা মুসলিম এবং বাংলাভাষী হওয়ার কারণে তাদেরকে ভারতীয় পুলিশ আটক করে বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে সীমান্তে এনে ছেড়ে দেয়।
ভিডিওতে এক নারী বলেন, আমাদের আধার কার্ড আর পয়সা কাইড়া নিছে। কয় বাংলাদেশি, ফিরায় দিব। কিন্তু আমরা ভারতীয়।
এই ঘটনায় শুধু সীমান্ত এলাকায় নয়, গোটা অঞ্চলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ধর্মীয় ও ভাষাগত পরিচয়ের ভিত্তিতে এই ধরনের জাতিগত প্ররোচনায় পুশ-ইন চেষ্টার ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের শামিল।
এদিকে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে এবং স্থানীয় বাসিন্দারাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সীমান্ত পাহারায় যুক্ত হয়েছেন।
বিজিবি জানায়, প্রতিটি সীমান্তের ঘটনায় ভারতীয় পক্ষকে পৃথকভাবে ফ্ল্যাগ মিটিং (পতাকা বৈঠক) ডাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরেও প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনা একদিকে যেমন সীমান্ত নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক উত্তেজনার বিষয়, তেমনি এটি একটি গভীর মানবিক সংকটেরও প্রতিফলন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে দুই দেশের মধ্যে কার্যকর আলোচনা ও মানবাধিকার বিষয়ক চুক্তি বাস্তবায়নের দাবি উঠেছে।
https://slotbet.online/