নাট্যকর ও কথাশিল্পী, হুমায়ূন আহমেদের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালের এই দিনে হুমায়ূন আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ফয়েজুর রহমান, মা আয়েশা ফয়েজ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তাঁর লেখালেখি শুরু।১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’।
১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় উপন্যাস ‘শঙ্খনীল কারাগার’। মূলত এ দুটি উপন্যাস প্রকাশের মাধ্যমেই তিনি বাংলা ভাষার শক্তিশালী লেখক হিসেবে পাঠক মহলে সমাদৃত হতে শুরু করেন।
হুমায়ূন আহমেদ ছোটবেলা থেকে পরিবারের মধ্যে পেয়েছিলেন সাহিত্যচর্চার অনুপ্রেরণা।
বাবা ছিলেন পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুর মহকুমার এসডিপিও হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে শহীদ হন।
তিনিও লেখালেখি করতেন। ‘দ্বীপ নেভা যার ঘরে’ শিরোনামে তিনি একটি বইও প্রকাশ করেছিলেন। তার মা আয়েশা ফয়েজ ‘জীবন যে রকম’ নামে একটি আত্মজীবনী লিখেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন হুমায়ূন আহমেদ। তবে লেখালেখির প্রতি ভালোবাসা আর চলচ্চিত্র নির্মাণের স্পৃহা তাঁকে শিক্ষকতা পেশা থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে সৃজনশীল জগতে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি হন তিনি। নির্যাতনের পর হত্যার উদ্দেশে গুলি করলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যান তিনি।
মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’।হুমায়ূন আহমেদের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, দেয়াল, মাতাল হাওয়া, শঙ্খনীল কারাগার, শ্রাবণ মেঘের দিন, গল্প, কবি, লীলাবতী, গৌরীপুর জংশন, এইসব দিনরাত্রি ইত্যাদি। উপন্যাসে তিনি তৈরি করেছেন হিমু, মিসির আলী, শুভ্রের মতো কালজয়ী চরিত্র। এসব চরিত্র প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অব্যাহতভাবে জনপ্রিয়।
টিভি নাট্যকার হিসেবেও হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন অনন্য। গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি প্রচারিত তাঁর লেখা ধারাবাহিক নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’ দিয়ে টিভি দর্শকের হৃদয় জয় করে নেন তিনি।
নাটক ছাড়াও তিনি সিনেমা নির্মাণে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর পরিচালিত সিনেমার মধ্যে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ এবং ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’ বিশেষভাবে প্রশংসিত।
সংখ্যায় বেশি না হলেও তাঁর লেখা গানও সমানভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৪ সালে তিনি পেয়েছেন একুশে পদক।
এ ছাড়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কারসহ পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা।
দিনটি উপলক্ষে আজ শনিবার গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হবে।
প্রতিবছরের মতো এবারও তাঁর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
https://slotbet.online/